সর্বশেষ

বিএনপি পুনর্গঠনে নেই গতি

সরকারের মামলার পর মামলার কারণে নেতাকর্মীরা কোথাও একত্র হতে পারছেন না : মির্জা ফখরুল

প্রকাশ :


২৪খবর বিডি: ' নানা কৌশল গ্রহণ করেও দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে পারছে না বিএনপি। সারাদেশের জেলা কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি গঠন হলেও সেসব পূর্ণাঙ্গ করার নাম নেই। কয়েকটি জেলা ও উপজেলায় কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বেশিরভাগ জায়গাতেই বিতর্ক দেখা দিয়েছে। তৃণমূলের মতামতকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ফলে বেড়েছে কোন্দল। আবার ত্যাগী ও যোগ্যদের বাদ এবং অনভিজ্ঞদের দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করায় ক্ষোভ বাড়ছে বলে সংশ্নিষ্টরা দাবি করছেন।'

* বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, কমিটি গঠন নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব আন্তরিক এবং কঠোর হলেও ফল পাচ্ছেন না। প্রভাবশালী নেতাদের হস্তক্ষেপে এবং অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের সৃষ্ট কোন্দলের কারণে সময়মতো কমিটি গঠন সম্ভব হচ্ছে না। আবার হাইকমান্ডের নির্দেশনায় যেনতেন কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। তবে সাংগঠনিক স্থবিরতার জন্য তৃণমূল নেতাকর্মীরা দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত গ্রহণে ধীরগতিকেও দুষছেন।

এ ছাড়া বেশকিছু জায়গায় প্রশাসনের বাধায় কাউন্সিল করা সম্ভব হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। এসব জায়গায় কর্মী সম্মেলনও করা যাচ্ছে না বলে দলটির নেতারা জানান।

 
' এসব বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৪খবর বিডিকে বলেন, সারাদেশে দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু সরকার ও প্রশাসনের বাধা-বিপত্তি, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার পর মামলার কারণে নেতাকর্মীরা একত্র হতে পারছেন না। কিন্তু এসবের মধ্যেও সাংগঠনিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চলছে। অনেক জায়গাতেই কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে। আরও বেশ কয়েকটি জেলায় কাউন্সিলের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।'

* সারাদেশে বিএনপির ৮২টি সাংগঠনিক ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র পাঁচটি জেলায় কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া কুমিল্লা মহানগর কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। আগেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে ৩০টিতে, যার মধ্যে ৬টির মেয়াদ আছে। আহ্বায়ক কমিটি আছে ৫১ টিতে, এর বেশিরভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ। আবার এসব কমিটির মধ্যে ২০১৪ ও ২০১৬ সালের আহ্বায়ক কমিটি ও ২০০৯ সালের পূর্ণাঙ্গ কমিটিও রয়েছে।

' দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রত্যেক জেলা ও মহানগর কমিটির মেয়াদ দুই বছর। মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এতে ব্যর্থ হলে যুক্তিসংগত কারণ দেখিয়ে আরও তিন মাস সময় নিতে পারবে। এই সময়েও কমিটি গঠনে ব্যর্থ হলে পূর্ববর্তী কমিটি বিলুপ্ত বলে গণ্য হবে। এরপর কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠনের শর্তে তিন মাসের জন্য আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেবে কেন্দ্র। আহ্বায়ক কমিটিও ব্যর্থ হলে কেন্দ্র থেকে কমিটি গঠন করে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে গঠনতন্ত্রে। কিন্তু এসব নিয়ম মানা হয় না।'

*একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দলকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ প্রক্রিয়ায় তিনি সারাদেশের সাংগঠনিক চিত্র তৈরি করেন। দলের সব বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে ধারাবাহিক ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। তৃণমূল থেকে নেতৃত্ব তুলে আনার জন্য কাউন্সিল প্রক্রিয়াকে প্রাধান্য দিয়ে সারাদেশে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেন। ভেঙে দেওয়া হয় বেশিরভাগ জেলা কমিটি। তিন মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে গঠন করা হয় আহ্বায়ক কমিটি। আবার যেসব জেলা কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়নি, সেখানে পুনর্গঠনও থমকে রয়েছে।
কাউন্সিল সম্পন্ন করা জেলার মধ্যে চাঁদপুর নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক চলছে। বিশেষ একজনকে নেতৃত্বে আনতে কেন্দ্রীয় বিএনপির একটি অংশ দলের গঠনতন্ত্র ভঙ্গ এবং জেলার তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতকে অগ্রাহ্য করে নিজেদের মতো করে কাউন্সিলের আয়োজন করে। এ নিয়ে জেলা বিএনপি কার্যত বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ঢাকা জেলা বিএনপির নেতারাও সেই পথে হাঁটছেন। এক দিনে একই স্থানে দুই উপজেলা বিএনপি কাউন্সিল অনুষ্ঠান করেছে। পছন্দের নেতাকর্মীদের দিয়ে মৌখিক হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করেছে। এর প্রতিবাদ জানিয়ে জেলার নেতাকর্মীরা এরই মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

 

/  সরকারের মামলার পর মামলার কারণে নেতাকর্মীরা কোথাও একত্র হতে পারছেন না : মির্জা ফখরুল   /


* বিএনপির দপ্তর সূত্র জানায়, সারাদেশে বিএনপির দশটি বিভাগীয় সাংগঠনিক এলাকা রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ সাংগঠনিক অবস্থায় রয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগ। এ দুই বিভাগের অনেক জেলায় বিএনপির অস্তিত্ব এখন বিলীন হওয়ার পথে। এর মধ্যে অন্যতম বান্দরবান জেলা। ২০১৭ সালে ২১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণার পরপরই ১৩ জন নেতা পদত্যাগ করেন, ৩ জন নেতা রাগে-ক্ষোভে আওয়ামী লীগে যোগ দেন।

' মেয়াদোত্তীর্ণ ওই কমিটি পুনর্গঠনের কোনো উদ্যোগ নেই। অভিযোগ রয়েছে, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের হস্তক্ষেপে বান্দরবান জেলা কমিটি পুনর্গঠনের কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। এর ফলে এ জেলার ত্যাগী আর যোগ্য নেতারা দিন দিন নিষ্ফ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন।
ঢাকা ও ফরিদপুর বিভাগ :এই দুই বিভাগে বিএনপির সাংগঠনিক ইউনিট ১৭টি। এর মধ্যে মানিকগঞ্জ জেলায় কাউন্সিল হয়েছে। এ ছাড়া ফরিদপুর জেলা ও মহানগরের আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ রয়েছে। অন্যান্য পূর্ণাঙ্গ ও আহ্বায়ক কমিটির একটিরও মেয়াদ নেই। এর মধ্যে গত বছরের ২০ মার্চ মাদারীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়। ঢাকা জেলা কমিটি নিয়ে বিব্রত দলের হাইকমান্ড।'

* চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা :এই দুই বিভাগে ১৪টি সাংগঠনিক ইউনিট কমিটি রয়েছে। এখানে চাঁদপুর ছাড়া সব জেলা কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ।
রাজশাহী ও খুলনা :রাজশাহী বিভাগে ৯টি সাংগঠনিক ইউনিটের সবগুলোই মেয়াদোত্তীর্ণ। খুলনা বিভাগের ১১টি সাংগঠনিক ইউনিটের একটিরও মেয়াদ নেই।

 

* বরিশাল :৮টি সাংগঠনিক ইউনিট কমিটির মধ্যে বরগুনা ও পিরোজপুর আহ্বায়ক কমিটি ছাড়া বাকিগুলোর মেয়াদ নেই। ভোলা জেলার কমিটি সর্বশেষ কবে হয়েছে, তার বিস্তারিত তথ্য নেই বিএনপির দপ্তরেও। তবে পটুয়াখালী ও ঝালকাঠি জেলা কাউন্সিল এ মাসেই হতে পারে।

' বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরীন বলেন, করোনার প্রকোপে সাংগঠনিক কার্যক্রম প্রায় দুই বছর স্থগিত ছিল। এরপর কাজ শুরু করলে প্রশাসন ও ক্ষমতাসীনরা বাধা দেয়। ঝালকাঠির প্রতিটি উপজেলা ও পৌর কাউন্সিল করতে গিয়ে বাধা ও হামলার শিকার হতে হয়েছে। নলছিটি উপজেলার কাউন্সিল বাধ্য হয়ে বরিশালে গিয়ে করতে হয়েছে। এর পরও সব জেলায় কার্যক্রম চলছে। খুব দ্রুত কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব বাছাই করা হবে।'

* রংপুর ও সিলেট :রংপুর বিভাগের ১০টি সংগঠনিক ইউনিট। এর মধ্যে দিনাজপুরে কাউন্সিল হয়েছে। সিলেট বিভাগের ৫টির মধ্যে শুধু সিলেট মহানগরের কাউন্সিল হয়েছে। অন্যগুলোর একটিরও মেয়াদ নেই।
*ময়মনসিংহ :৬টি সাংগঠনিক ইউনিট কমিটির মধ্যে শুধু শেরপুর জেলা কমিটির মেয়াদ রয়েছে। তাও অবশ্য আগামী আগস্ট পর্যন্ত।

 

Share

আরো খবর


সর্বাধিক পঠিত